ঢাকা,বুধবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৪

ফাঁন্দে পড়িয়া বগা কাঁন্দেরে!! বিচারপতির স্ত্রীর কাছ থেকে ঘুষ দাবি করে সহকারী দারোগা ছাদেক শ্রীঘরে

m rএম.আর মাহমুদ ::

মাছের রাজা ইলিশ, বাতির রাজা ফিলিপ্স। এমন একটি বিজ্ঞাপন এক সময় টিভিতে প্রচারিত হত। যা শুনে ফিলিপ্স এর বাতি প্রচার-প্রসাার বৃদ্ধি পেত। বেরসিক অনেকে মাছের রাজা ইলিশ, বাতির রাজা ফিলিপ্স, সাথে যোগ করতে শুনেছি দেশের রাজা পুলিশ। যার যথার্থতা প্রমাণ করেছে পুলিশ বাহিনীর একজন নাখান্দা সদস্য। তিনি আবার ঢাকায় পুলিশের বিশেষ শাখায় কর্মরত। তার পদবী সহকারী দারগা (এ.এস.আই) নাম ছাদেকুর রহমান। হাই কোর্টে কর্মরত একজন বিচারপতির স্ত্রীর কাছ থেকে ২ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করে এখন ‘ফাঁন্দে পড়িয়া বগা কাঁন্দেরে’ অবস্থায়। সহকারি দারোগা ছাদেক জীবনে চিন্তাও করেনি যে তার সগোত্রীয় পুলিশের হাতে আটক হয়ে শ্রীঘরে যেতে হবে। কথায় আছে ‘নছিবের কিল, ভুতে কিলায়’ ১লা সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার সকালে জাতীয় কয়েকটি পত্রিকায় চোখ বুলাতে গিয়ে একদিকে চমৎকার অপরদিকে হতাশাজনক সংবাদটি চোখে পড়েছে। হাইকোর্টের বিচারপতি আবু তাহের মোহাম্মদ সাইফুর রহমান সাহেবের ২ ছেলে পাসপোর্টের ভেরিফিকেশনের জন্য ২ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেছেন, মাননীয় বিচারপতির স্ত্রীর কাছ থেকে। পরে বিষয়টি সংশ্লিষ্ট আদালতের নজরে আসায় বিচারপতি রেজাউল হকের একক বেঞ্চে সপ্রণোদিত হয়ে অভিযুক্ত পুলিশকে আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিলে দূর্দান্ত প্রতাপশালী সেই পুলিশ আদালতে হাজির হতে বাধ্য হয়। বিজ্ঞ আদালত তাকে থানায় সোপর্দ করার নির্দেশ দেয়। হাইকোর্টের রেজিষ্ট্রার তাকে শাহবাগ থানায় সোপর্দ করা হবে বলে সংবাদপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।

এখানে একটি গল্পের অবতারণা না করলে বিষয়টি পরিপূর্ণ হয় না। হাবা-গোবা এক শ্রমিক পাহাড়ে লাকড়ী সংগ্রহ করতে গিয়ে হঠাৎ কান পরিষ্কার করার প্রয়োজন অনুভব করে, ওই শ্রমিক কোন কিছু না পেয়ে বিষধর ছোট একটি গোখরা পেয়ে সাপের ছোট লেজটি কানে ঢুকিয়ে পরিষ্কার করছিল, এমন সময় বিষধর সাপের কামড়ে লাকড়ী সংগ্রহ করতে যাওয়া হতাভাগা শ্রমিকটি মৃত্যু কোলে ঢলে পড়ল। বিষয়টি বাস্তব মনে না হলেও অবাস্তব নয়। কিছু কিছু ঘটনা সংবাদের শিরোনাম হয়, যেমন- কুকুর মানুষ কামড়ানো স্বাভাবিক, কিন্তু মানুষ কুকুর কামড়ালে বিষয়টি সংবাদ শিরোনাম হয়। যে পুলিশ দিনরাত মেহনত করে অপরাধী দমন করতে আর সন্ত্রাসীদের আটক ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করে, সে পুলিশের কোন সদস্য যদি নিজের অপকর্মের জন্য গ্রেফতার হয়, তাহলে সেটা সংবাদ শিরোনাম হওয়া স্বাভাবিক। কুনাইন জ্বর সরাবে বটে, কুনাইন সরাবে কে? এমন প্রশ্ন নিয়ে প্রতিনিয়ত চলাফেরা করতে হচ্ছে আম-জনতাকে। প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ নানা সমস্যা সমাধানের আশায় পুলিশের স্মরণাপন্ন হয়। এক্ষেত্রে কিভাবে সহজ-সরল মানুষগুলো পুলিশের হাতে প্রতারিত হচ্ছে, তার প্রমাণ ভুরি ভুরি। ওই পুলিশের কপাল মন্দ, সে উচ্চ আদালতের একজন বিচারপতির ২ ছেলের পাসপোর্ট ভেরিফিকেশনের জন্য বিচারপতি মহোদয়ের স্ত্রীর কাছ থেকে ২ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করে গ্রেফতার হয়েছে। কিন্তু সারাদেশে পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে গিয়ে পুলিশের বিশেষ শাখায় কর্মরত দারোগা, সহকারী দারোগাদের হাতে মানুষগুলো কিভাবে হয়রানীর শিকার হচ্ছে তার কি কোন পরিসংখ্যান বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোতে আছে? এমনও দেখা গেছে, পুলিশের দাবি মোতাবেক অর্থ দিতে না পারায় পাসপোর্ট ভেরিফিকেশনে অনেক জন্মসূত্রে স্বদেশী নাগরিক হয়েও মিয়ানমারের নাগরিক হিসেবে চিহ্নিত করে পাসপোর্ট না পাওয়ার নজির বেশুমার। বিশেষ শাখার একজন সহকারী দারোগা এমন ঘটনায় পুরো পুলিশ বাহিনীকে দায়ী করার কোন যুক্তি নেই। কারণ দেশে পুলিশের যথেষ্ট অবদান রয়েছে। পুলিশ একটি সু-শৃঙ্খল বাহিনী। এ বাহিনীতে খারাপের সংখ্যা যেমন আছে, তেমনি আছে ভালোর সংখ্যাও। ইতিমধ্যে অনেক পুলিশ সদস্য ইয়াবাসহ গ্রেফ্তার হয়ে সংবাদ শিরোনাম হতেও দেখেছি। কথায় আছে- “মাছের পচন শুরু হয় মাছের মাতা থেকে”। আইনের রক্ষকেরা যদি ভক্ষকের ভুমিকায় অবতীর্ণ হয় তাহলে সাধারণ আমজনতা যাবে কোথায়? বেরসিক এক ব্যক্তির অভিমত ‘বাংলাদেশে যেমন হাজ্বী আছে, পবিত্র মক্কা নগরীতেও চোর আছে।’ শুধুমাত্র একটি হুতুম পেঁচার জন্য পুরো বাগানের সৌন্দর্য নষ্ট হোক, তা কেউ কামনা করে না। বিষয়টি হালকা ভাবে নেয়ার কোন সুযোগ নেই। এক সময় সরকারি চাকুরীতে নিয়োগ পাওয়ার আগে তার ১৪ গোষ্ঠীর অতীত কর্মকাণ্ডের খতিয়ান যাচাই করা হত, কিন্তু এখন সে প্রথা আর নেই। ফলে যে যেভাবে পারে, সেভাবেই চাকুরীতে ঢুকে যাচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন পুলিশ কনস্টেবল দুঃখ করে বলতে শোনা গেছে, পিতার জমি বিক্রি করে পুলিশে চাকুরী নিয়েছি, প্রমোশন নিতে টাকার দরকার। টাকা না থাকলে যোগ্যতা থাকার পরও কোন কাজ হচ্ছে না। এছাড়া উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুনজরের জন্য টাকা দিতে হয়। টাকাগুলো তারা কিভাবে যোগাড় করবে? বেতনের টাকায় সংসার চলে না। উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের চাহিদা মেটাতে গিয়ে ইচ্ছা না থাকা স্বত্বেও সাধারণ মানুষের সাথে প্রতারণা করে আইনের ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করতে হচ্ছে। যাব কোথায়? সব মাছে ময়লা খায়, দোষ হয় শুধু গাওরা মাছের।

এম.আর মাহমুদ
চকরিয়া

পাঠকের মতামত: